বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় :-৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এতদিন মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে চিহ্নিত হত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এই মান কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সূচক বদলে যাচ্ছে। যদিও এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তাহলে সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের শরীরের তাপমান কত হবে? সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের গবেষণার রিপোর্ট ‘ইলাইফ’ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমান হবে ৯৭.৮৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। প্রায় ৩৫ হাজার ব্রিটিশের শরীরের তাপমাত্রা মেপে বিজ্ঞানীরা এই দাবি করেছেন। তাই স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দাবি, উনিশ শতকের এই সূচক একুশ শতকে এসে প্রায় এক ডিগ্রি কমে যাচ্ছে। বর্তমানে মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমান ৯৭.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৯৭.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে। তবে মহিলারা অবশ্য আরও একটু উষ্ণ। মহিলাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি। কেন কমছে স্বাভাবিক তাপমান? গবেষকদের দাবি, পরিবেশ, পরিস্থিতি, শারীরিক অবস্থা, বয়স নানা বিষয়ের উপর শরীরের তাপমান নির্ভর করে। আসলে এই তাপমাত্রার পরিমাপ একটা পর্যবেক্ষণ মাত্র। আরও একটি কারণ উঠে আসছে এই গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একসময় শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থার্মোমিটার রাখা হত ‘আর্মপিট’ বা বগলের তলায়। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ‘ওরাল টেম্পারেচার’ মাপা হয়। অর্থাৎ থার্মোমিটার রাখা হয় জিভের নীচে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ওরাল টেম্পারেচার সবসময়ই একটু কম হয়। আবার আরেকটা তত্ত্বও উঠে আসছে, বর্তমান সময়ে মানুষ নানান ধরণের ওষুধ বা পথ্য খেয়ে থাকেন। এই কারণেও শরীরের তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। সবমিলিয়ে গবেষকরা মনে করছেন, স্বাভাবিক’ তাপমাত্রা নির্দিষ্ট করে কিছু হয় না। প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব স্বাভাবিক তাপমাত্রা (Normal Tempreture) রয়েছে। আর এই নর্মাল টেম্পারেচার নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। যেমন, বয়স, শারীরিক সক্ষমতা, রোগ এবং কী ধরনের ওষুধ খাওয়া হচ্ছে, শারীরিক পরিশ্রম কতটা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমন ধরুন, তরুন বয়েসের কোনও ব্যক্তির তাপমাত্রা বয়স্কদের থেকে বেশি হয়। যাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি, যাদের রক্ত সঞ্চালন ভালো, যাদের সেরকম কোনও রোগ নেই, যাদের বেশি মাত্রায় ওষুধ খেতে হয়না, তাঁদের শরীরে তাপমাত্রা অন্যদের থেকে বেশি। মহিলাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর। যেমন, যাদের মনোপেজ হয়ে গেছে বা বয়:সন্ধির কিশোরীর শরীরের তাপমাত্রা হেরফের হবে। এছাড়া আবহাওয়া ও পরিবেশও একটা বড় ফ্যাক্টর। যেমন ঠান্ডার সময় শরীরের তাপমাত্রা কম থাকে, গরমের সময় সেটা বেড়ে যায়। তাই আদ্যিকালের নিয়ম ভুলে যান, মানব শরীরে স্বাভাবিক তাপমান বলে আর কিছু থাকবে না। তবে বিজ্ঞানীরা মেনে নিচ্ছেন বর্তমানে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা এক ডিগ্রি মতো কমেছে।