ভারত তো বটেই, কলকাতাতেও hMPV আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। অনেকেই বিভ্রান্ত এই hMPV ভাইরাস কি করোনা-র মতো ঘাতক? আবার এও প্রশ্ন উঠছে এই ভাইরাসের কারণে কি ফের লকডাউন হবে? না হোক, ফের সোশ্যাল ডিসটেন্ট মেনে চলতে হবে? বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায়, মূলত ফেসবুকে খুব চর্চা চলছে, যে এই নতুন চিনা ভাইরাসের জন্য আবার মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু এই ভাইরাস কি এতটাই ভয়ঙ্কর? এর উপসর্গই বা কি? কারা আক্রান্ত হয় বা এর থেকে সেরে ওঠার উপায়ই বা কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, সংকেত হল hMPV… মহামারী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। অনেকেরই hMPV রিপোর্ট পজিটিভ আসতে পারেন, তবে সেটা একেবারেই স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস সাধারণ শ্বাসনালীর সংক্রমণকারী ভাইরাস, যা আড়াই দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে কোভিড বা করোনা ভাইরাসের মতো এত মারাত্মক নয়। কারণ, করোনা ভাইরাস ছিল একেবারে নতুন কোনও স্ট্রেইন। তবে এই হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস অনেক পুরোনো বলেই দাবি করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
কোভিড বা করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই আরটি-পিসিআর টেস্ট করেছিলাম, এ কথা নিশ্চই আমরা ভুলিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘hMPV প্যানেলে যদি আমরা আরটি-পিসিআর টেস্ট করি, তাহলে দেখা যাবে যে অনেকেরই রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। তাই এটাকে নিয়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রিপোর্ট পজিটিভ এলেই যদি বলা হয় যে এই hMPV ছড়িয়ে পড়েছে বা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে, এটা ঠিক নয়। এতে অযথা আতঙ্কিত হওয়া ঠিক হবে না। বেশিরভাগ চিকিৎসকদের দাবি, এটা অত্যন্ত পরিচিত একটা ভাইরাস।
কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআর (ICMR) এবং ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম (IDSP) নেটওয়ার্কের বর্তমান ডেটার উপর ভিত্তি করে জানিয়েছে ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক ইলনেস (ILI) বা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা (SARI) ক্ষেত্রে কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেনি বলে দেখা গিয়েছে। ফলে, এই ডিটের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ মনসুখ মাণ্ডব্য জানান, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। প্যানিক করার কারণ নেই। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
আসলে, দেশে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০ জন শিশুর শরীরে মিলেছে এইচএমপিভি ভাইরাস। করোনা নিয়ে কেন্দ্র যতটা দেরিতে সতর্ক হয়েছিল, সেরকমভাবে এইচএমপিভি নিয়ে আর তা করতে চাইছে না কেন্দ্র। গত মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, সব রাজ্যকে সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য তৈরি করতে হবে নজরদারি টিমও। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও দ্রুত এই ভাইরাস আক্রমণ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়। স্বাস্থ্য ভবনে জরুরি বৈঠক করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। ফুসফুসের সংক্রমণ তেমন বাড়েনি। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস বা সারি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস বা আইএলআই রোগে আক্রান্তদের চিহ্নিত করতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে, এটা কোভিড বা করোনার মতো বড় আঁকার ধারণ করবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও বয়স্কদের বাড়তি নজর রাখা ও সতর্কতা রাখা প্রয়োজন বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।