গলব্লাডারে পাথর হয়েছিল,ল্যাপারোস্কপি করে সেই পাথর বের করেতে গিয়ে বিপত্তি! নার্সিংহোম সরকারি হাসপাতাল ঘুরে কলকাতার বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসায় তেইশ লাখ খরচ।
গয়না বন্দক দিয়ে চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়েছে দাবী, রোগির পরিবারের।পুরো টাকা মেটাতে না পারায় রোগির ছুটি নিয়ে সংশয়!
গল ব্লাডারে পাথর অস্ত্রোপচার এখন খুবই সাধারন বিষয়।সেই সাধারন অস্ত্রপচারের পর জলের মত টাকা খরচ আর রোগির জীবন সংশয় হবে ভাবতেই পারেননি রাউত পরিবার।
চুঁচুড়ার সাহাগঞ্জ পাত্র পুকুরের বাসিন্দা সঙ্গিতা রাউত(৪৬)।শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালের একজন গ্রুপ ডি স্বাস্থ্য কর্মি।
তার গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে গত বছর অক্টোবর মাসে।স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়ে পরীক্ষা করান। অস্ত্রোপচার করাতে হবে জানান ওই চিকিৎসক।এরপর চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক প্রকাশ সামন্তর কাছে রোগিকে নিয়ে যায় তার পরিবার।
চিকিৎসক তাকে চুঁচুড়ার একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে ল্যাপারোস্কপি করেন গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪।পাথর বেরিয়ে গেলে ১ লা জানুয়ারী ছুটি দিয়ে দেন।বাড়ি গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।এরপর আবার চিকিৎসক সামন্তর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রোগির পরিবার।চিকিৎসক তাদের জানান,অস্ত্রপচারের পর এরকম হতে পারে।সেলাই কাটার পর ঠিক হয়ে যাবে।আরো কয়েকদিন পর রোগির পেট ফুলতে থাকে।চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।চুঁচুড়া হাসাপাতালে দশ দিন ভর্তি থাকার পর ছুটি দেওয়া হয়।বাড়ি ফিরে আবার সমস্যা আবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।চিকিৎসা আবার নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বলেন।নার্সিংহোম জানিয়ে দেয় তাদের সেই পরিকাঠামো নেই।তাই আবারও চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি।সেখানে যখন কিছুই হচ্ছে না রোগির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।হাসপাতাল তাকে কলকাতা রেফার করে।
সঙ্গিতার ছেলে অনিকেত বলেন,এরপর মাকে নিয়ে আনন্দপুরে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করি।আমি বেসরকারী একটি সংস্থায় কাজ করি।সেখানে সাড়ে চার লক্ষ টাকার মেডিক্লেম করা আছে।হাসপাতালে সেটা জানালে তারা বলে এতে হবে হয়ত আরো কিছু টাকা লাগতে পারে।সেখানে চিকিৎসা চলতে থাকে।মেডিক্লেমের টাকা শেষ হওয়ার পরেও আরো ৭ লক্ষ টাকা আমরা হাসপাতালে জমা দিই।কুড়ি দিনে ২২ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা বিল হয়েছে।নিজেদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের গয়না বন্দক দিয়ে টাকা জোগাড় করেছি।কিন্তু এত টাকা আমরা দিতে পারিনি।ওই হাসপাতলে মা আপাতত সুস্থ হয়েছে।পেটের পাশ দিয়ে চ্যানেল কেটে মল বেরোনোর রাস্তা করে দিয়েছে।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন পেটের ইনফেকশন ঠিক হলে আবার অস্ত্রপ্রচার করতে হবে।তখন আরো টাকা দরকার।
চুঁচুড়ায় যে অস্ত্রপচার হয়েছিল সেখানে
সঙ্গীতার স্বামী অঞ্জন রাউত হুগলি মহসীন কলেজের গ্রুপ ডি কর্মী।তিনি নিজেও কিডনির অসুখে ভুগছেন।তিনি বলেন,এত টাকা আমাদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।আমরা মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য দপ্তর এবং হুগলি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।প্রয়োজনে আমরা ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরে যাব।এর একটা বিহিত চাই।
চিকিৎসক প্রকাশ সামন্ত ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন ওই পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।অস্ত্রোপচার এক মাসের বেশি আগে হয়েছে।তার পর কিছু হয়েছে কিনা সেটা বলতে পারব না।
হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক মৌলিকর বলেন,কোন টেকনিক্যাল বিষয় হতে পারে।বিষয়টা ভালোভাবে জানতে হবে।কি থেকে কি হয়েছে। ওই পরিবার অভিযোগ জানালে এই ঘটনা তদন্ত হবে।