ডা: মহুয়া মুখার্জী
( ডেপুটি সুপার মানিকতলা ই,এস,আই হসপিটাল)
আজকে আমরা আলোচনা করবো পলিসিস্টিক ওভারি নিয়ে। যার মানে ওভারি তে সিস্ট থাকা।
আমি বরাবরই বলে এসেছি বাঙালির লাইফ স্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাস বাঙালি কে উপহার দিয়েছে বহু নাম করা অসুখ। যেমন ডায়বেটিস, হার্ট এর অসুখ, ওবেসিটি, প্রেসার, আর তার সাথেই অলঙ্কার হলো ওভারি তে সিস্ট ( অবশ্যই মহিলা দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য )।
এটি আসলে একটি এমন কন্ডিশন যেটা মহিলা দের সমস্ত হরমোনাল সিস্টেম টাকে এফেক্ট করে। যেসব মহিলা রা pcos এ ভুগছেন, তারা সাধারণত মহিলা হরমোনের সাথেই ( ইস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন) অল্প পরিমাণে পুরুষালি হরমোন ( এন্ড্রোজেন ) সিক্রেট করেন তার ফলে মহিলাগত কিছু স্বাভাবিক ঘটনা এর অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। যেমন অনিয়মিত পিরিওড, বা বহুদিন পিরিওড না হওয়া, পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা, বাচ্চা ধারণে অসুবিধা, বা এমনকি অপারগতা, গায়ে লোমের আধিক্য, কণ্ঠস্বর এ মৃদু কাঠিন্য, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ধরনের সিম্পটম গুলো সাধারণত ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়েসের মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যেটা সন্তানধারণের জন্য গোল্ডেন টাইম।
আমি বাঙালি মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখি যে তারা অধিকাংশই এই ব্যাপার টা সম্বন্ধে একদম ই অন্ধকারে। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করে যান বা দিনের পর দিন পিল খেয়ে যান আর তার সাথেই চলে পেন কিলার। এটা মারাত্মক ব্যাপার। অথচ এই সামান্য সিস্ট এর জন্য তাদের সারা টা জীবন হতাশা তে ডুবে থাকে। বহু ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক এটাকেই সুন্দর হাতিয়ার করে বেশ কিছু টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। আর আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরাও আসল সমস্যার সমাধান না করে এদিক ওদিক ছুটে যাচ্ছি।
PCOS এর প্রধান কিছু লক্ষণ হলো…….
১. ওভারি তে একাধিক সিস্ট
২. সাধারণ মাত্রার বেশি এন্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য
৩. অনিয়মিত মাসিক চক্র
৪. অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি
৫. অনিয়মিত ঋতুর সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তপাত ও ব্যথা
৬. স্কিন এ গাড়হ দাগ
৭. হেডেক
PCOS এ প্রচুর ছোট ছোট জলীয় পদার্থ ভর্তি ব্যাগ এর মত স্ট্রাকচার তৈরি হয় ওভারি র ভিতরের দেওয়াল এ। এই গুলি আসলে হলো অপরিনত ডিম্বাণু যেগুলো কখনোই পরিণত হয় না , যার ফলে গর্ভ ধারণ ও সম্ভব হোয় না।
PCOS এর ঠিক মত ট্রিটমেন্ট না হলে , পরবর্তী জীবনে যে সমস্যা গুলো হতে পারে, সেগুলি হলো……
১. বন্ধ্যাত্ব
২. বিপাকিয় ডিসঅর্ডার যেমন ডায়াবেটিস,
কোলেস্টেরল ইস্যু
৩. ঘুমের অসুবিধা
৪. চুল পড়ে যাওয়া
৫. মানসিক অবসাদ
৬. জরা়ুমুখের ক্যান্সার
একটা হরমোন টেস্ট আর ইউ এস জি এর মাধ্যমে সহজেই এইরোগ টিকে চিংহিত করা যায়।
সুতরাং ভয় না পেয়ে, যারা এই ধরনের সিম্পটম এ ভুগছেন, টেস্ট করিয়ে যথাযথ চিকিৎসা এর সাহায্য নিন। জীবন আবার দেখবেন বর্ণময় হয়ে উঠেছে।
অনুলিখন – বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়