- ডা: সৌমদীপ ঘোষ, মেডিকা হসপিটাল:-একটা সময় ছিল যখন বয়স্ক ব্যক্তিরাই হৃদরোগের শিকার হতেন। কিন্তু সময় যত আধুনিক হচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে প্রায় সব বয়সী মানুষই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদরোগের চিকিৎসা অনেকটাই ভালো হয়েছে। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে বাঁচার উপায় খুবই কম বলেই মতামত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। আধুনিক গবেষণায় উঠে এসেছে মারাত্মক তথ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণেই মানুষ আজকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাদ্যাভাস, মদ্যপানে আসক্তি, মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তবে কয়েকটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক ঠেকানো সম্ভব। কয়েকটি লক্ষণ হৃদরোগের ইঙ্গিত দেয়, সেগুলি চিহ্নিত করতে পারলেই আগাম সতর্ক হওয়া যায়।
হৃদরোগের লক্ষণ –
১. বুকে ও হতে ব্যাথা হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। বুকে, বাহুতে, চোয়ালের পিছন দিকে ও গলায় চিনচিন করে ক্রমাগত ব্যাথা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. অনেক সময়ই কেউ কেউ বুকের ভিতর জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। অনেকেই এটাকে গ্যাসের কারণে ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু এই ধরণের জ্বালাপোড়া হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ।
৩. বদহজম, বমিবমি ভাব, অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। এটা হলেই সাবধান হোন।
৪. ঘনঘন স্বাস ওঠানামা, ঘামতে থাকা এগুলি হৃদরোগের উপসর্গ। এমনকি প্রবল শীতেও রোগী ঘামতে শুরু করেন। এরকম হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
৫. হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হটাৎ করেই যে হয় এমনটা নয়। অনেক সময় খুহ ধীরে ধীরে হার্টকে ব্লক করে দেয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এটাকে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন’ বলে। এক্ষেত্রে রোগীর প্রবল অস্বস্তি হয়।
হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক করণীয় কী-
১. যদি বুঝতে পারেন কোনও ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তবে সঙ্গে সঙ্গেই কাছের হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। একমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাই সঠীকভাবে হৃদরোগ নির্নয় করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সক্ষম।
২. হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে বাতাস চলাচলের জন্য দরজা-জানালা সব খুলে দিন। রোগীকে গভীরভাবে স্বাস নিতে বলুন।
৩. রোগীকে শক্ত জায়গায় শুইয়ে দিন, মাথার দিকে উচু করে বালিস বা কিছু দিয়ে রাখুন। গায়ের জামা-কাপড় ঢিলে করে দিন।
৪. যদি দেখেন রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না, তবে তাঁকে কৃত্রিম উপায় শ্বাস-প্রস্বাস চালুর চেষ্টা করুন।
৫. যদি রোগী বমি করতে থাকেন, তবে তাঁকে কাত করে শুইয়ে দিন। যাতে সহজেই বমি করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। এতে হৃদপিন্ডে বমি ঢুকে বিপত্তি হবে না।
৬. রোগীকে সরবিটেড জাতীয় টেবলেট দেওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগের প্রতিকার-
১. মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান বৃদরোগের প্রধান কারণ। তাই সুস্থ থাকতে ধূমপান নিয়ন্ত্রন করুন।
২. মদ্যপান অনিয়ন্ত্রিতভাবে করলে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
৩ মাদক হৃদরোগের একটি বড় কারণ, ফলে মাদক (গাঁজা, চরস, বা হেরোইন, কোকেন এই জাতীয় মাদক) সেবন করা বন্ধ করুন।
৪. চিন্তা বা দুশ্চিন্তা থেকে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই নিজেকে কিভাবে চিন্তামুক্ত রাখবেন সেটা ভাবুন।
৫. শরীরের রক্তচাপ মাঝেমধ্যেই মেপে নিন। রক্তচাপ অস্বাভাবিক হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন। প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে হাঁটুন বা যোগ ব্যায়াম করুন।
৭. প্রচুর পরিমান জল ও শাক-সবজি খান।
**এই প্রতিবেদন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা।**