টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছিলেন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ প্রবীন চিকিৎসক প্রয়াত ডা: রাজকুমার গাঙ্গুলী।
গোটা বিশ্বেই বহু দম্পতি সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হন। কোনও ক্ষেত্রে স্বামী আবার কোনও ক্ষেত্রে স্ত্রীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্যই তাঁরা সন্তান ধারণ করতে অক্ষম হন। তাঁদের জন্যই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম বড় আশির্বাদ হল টেস্ট টিউব বেবি। যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব আবিস্কার। টেস্ট টিউব বেবি, যার পোশাকি নাম ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)। এক কথায় নি:সন্তান দম্পতির সন্তান প্রদান। টেস্ট টিউব কথাটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এখানে সন্তান বা ভ্রুণের বিকাশ হয় কাঁচের টিউবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি একটু সময় সাপেক্ষ। সাধারণত ঋতুস্রাবের ৩ দিন পর থেকে শুরু হয় প্রাথমিক প্রক্রিয়া। ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণু বের করা হয় আলট্রাসাউন্ড সূঁচের মাধ্যমে। মাত্র ২০ মিনিটেই ল্যাপরোস্কোপিক পদ্ধতিতে ডিম্বাণু পৃথকীকরণ করা সম্ভব। একই সময়ে পুরুষের দেহ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। এরপর ল্যাবরেটরিতে সেগুলি থেকে বেছে নেওয়া হয় সজীব ও অতি সক্রিয় শুক্রাণু। বাছাই করা শুক্রাণুগুলি এবার নিষিক্ত হওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে। এক্ষেত্রে শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণুর অনুপাত হয় ৭৫০০০:১। যদিও একাধিক ডিম্বাণুর জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করা যায়। এরপর সেই পেট্রিডিশটিকে মাতৃগর্ভের অনুরূপ একটি পাত্রে বা ইনকিউবিটরে রাখা হয়, যা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে থাকে। এরপর নিশ্চিতরূপে নিষেক ঘটাতে চাওয়া একটি শুক্রাণু ইনট্রোসিটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতিতে সরাসরি ডিম্বাণুর ভিতর প্রবেশ করানো হয়। এই নিষিক্ত ডিম্বাণু একটি বিশেষ গ্রোথ মিডিয়ামে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরিপক্ক ভ্রুণে পরিণত হয়। যা ৬-৮টি কোষের ভ্রুণে পরিণত হলেই তা মহিলার জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। যদিও গর্ভধারণ নিশ্চিন্ত করতে একাধিক ডিম্বাণু প্রতিস্থাপণ করা হয়ে থাকে সাধারণত। এই ভ্রুণই ক্রমশ পরিণত হয়ে জন্ম হয় টেস্ট টিউব বেবির। এটা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই যথেষ্ট দায়িত্ব এবং একনিষ্ঠতার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হয় চিকিৎসক দলকে।
একজন চিকিৎসক হিসেবে যখন কোনও নি:সন্তান দম্পতির কোলে সন্তান তুলে দিতে পারি এর থেকে আনন্দের আর কিছুই হয়না। বিশেষ করে ওই মায়ের চোখে আনন্দের জল দেখে প্রতিবারই মন ভরে যায়। তাইতো এই ৭৭ বছর বয়সেও রোজ নতুন উদ্যমে ক্লিনিকে রোগী দেখতে বসে যাই। একটি কথা অবশ্যই বলতে চাই, টেস্ট টিউব বেবির চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। কারণ যে সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলি ব্যয়বহুল। আবার কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হবে তার ওপরও নির্ভর করে খরচের পরিমান।
টেস্ট টিউব বেবির ক্ষেত্রে মাকেও অত্যন্ত সচেতন ও সাবধানে থাকতে হয়। পাশাপাশি প্রসবের স্থানটিও ঠিকঠাক হতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে সাধারণত ৮ মাসের গর্ভধারণের পরই প্রসব করাতে হয় বেবিকে। Level-3 NICU (Neonatal Intensive Care Unit) না থাকলে টেস্ট টিউব বেবির ডেলিভারি খুবই কঠিন। ডেলিভারির পরও NICU ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় শিশুটিকে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভিনব আবিস্কার এই টেস্ট টিউব বেবি-
বন্ধ্যাত্ব এখন আর কোনও সমস্যা নয়
বন্ধ্যাত্ব সমস্যা সমাধনের সর্বাঙ্গীন সমাধান।
জহর টেস্ট টিউব বেবি সেন্টার- সপ্তাহে প্রতিদিন।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভিনব আবিস্কার এই টেস্ট টিউব বেবি
বন্ধ্যাত্ব আজ আর কোনও অভিশাপ নয়, এই অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃত্বের আনন্দ ও স্বাদ পেয়েছেন বহু মহিলা।